পয়লা বৈশাখ

আজ বাঙালির পয়লা বৈশাখ। দোকানে দোকানে হালখাতা করার জন্য সবাই উৎসুক। সকাল সকাল দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দির কালীঘাট তারাপীঠ তারকেশ্বর লম্বা লাইন মাকে পূজো দেওয়ার জন্য নতুন বছরের শুরুতে মায়ের আশীর্বাদ সঙ্গে নিয়ে প্রতিটি প্রতিটি বাঙালির ঘরে ঘরে শুরু হয় পয়লা বৈশাখ উদযাপন।

পয়লা বৈশাখ এর সকালবেলায় ভিড়টা যখন থাকে মন্দিরে নতুন খাতা পুজো হয়, আর বিকেলের দিকে ভিড় টা বাড়তে থাকে বিভিন্ন দোকানে। বাড়ির ছোটরা নতুন জামা কাপড় পড়ে, বড়দের সঙ্গে সঙ্গে তারাও যায় বিভিন্ন দোকানে মিষ্টির প্যাকেট আনতে এ এক অন্য অনুভূতি। মিষ্টির প্যাকেটে থাকে রকমারি সব মিষ্টি। কোথাও লাড্ডু গজা আবার কোথাও নিমকির সাথে রসগোল্লা কিংবা জল ভরা সন্দেশ।

বাঙালির বারো মাসের ১৩ পার্বণ আর এই ১৩ পার্বণের অন্যতম একটি পার্বণ হল বাঙালির এই পয়লা বৈশাখ অনুষ্ঠান। সারা বছর যেসব দোকান থেকে বাঙালির বাড়িতে মাসকাবাড়ি মালপত্র আসে তারই হিসেব-নিকেশ করা হয়, দেনা পাওনার খাতায় তোলা হয় নতুন বছর। প্রতিটি সন্তান যেন থাকে বাঙালি দুধে ভাতে। এই চাওয়া নিয়েই লক্ষ্মী গণেশের পুজো হয় প্রতিটা দোকানে।

বাঙালি বছর এবার ১৪৩২ বঙ্গাব্দে পা দিল। বাংলা সাল অনুযায়ী এই বছরের প্রথম মাস হল বৈশাখ শেষ মাস চৈত্রের পর বৈশাখের এই প্রথম দিনটিতে পালিত হয় পয়লা বৈশাখ। পয়লা কথার অর্থ প্রথম,বৈশাখ মাসের প্রথম দিনটিতে প্রতিটি বাঙালি ঘর যেন নতুন করে বাঁচতে শেখে যদিও ইংরেজি অর্থাৎ গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আমাদের দেশের সমস্ত কর্মকাণ্ড চালিত হয়ে থাকে তবে এই পয়লা বৈশাখ কে কেন্দ্র করে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা সমস্ত বাঙালিরা বছর শুরুর আনন্দে সামিল হয়ে থাকে।

ইতিহাস ঘাটলে দেখতে পাওয়া যায় সম্রাট আকবর তার হিজরি সাল অনুযায়ী খাজনা আদায় করতেন। কিন্তু বাংলায় এর বিরোধ দেখা দেয় কারণ হিজরী সাল অনুযায়ী বাংলায় তখন সমস্ত ফসল মাঠে,তাই খাজনা দেওয়ার সুবিধার্থে পরবর্তীকালে বাংলা মাসকেই ধরে খাজনা নেওয়া শুরু হতে থাকে। পড়ছি নতুন দিনপঞ্জি চালু করেন তার নাম দেন তারিখ-ই ইলাহি। এই হিন্দু ও মুসলমানের মেলবন্ধনই পরবর্তীকালে পয়লা বৈশাখের জন্ম দেয় বলে অনেকে মনে করেন।

তবে অনেক বাঙালি পন্ডিত এর সঙ্গে বিরোধ পোষণ করেন তাদের মতে গৌড়রাজ শশাঙ্কের আমল থেকেই এই পয়লা বৈশাখ চালু ছিল। তখন থেকেই ভারতবর্ষে বঙ্গাব্দের বেশ রমরমা শুরু হয়।

ইংরেজি বছরের যেমন জানুয়ারি ঠিক তেমনি বাংলা বঙ্গাব্দের বৈশাখ ভারতবর্ষের প্রতিটি কোন এক ছড়িয়ে থাকা বাঙ্গালীদের কাছে বাংলা নববর্ষ মানে আবেগের নাম। যতই তারা ১৪৩২ কিংবা ১৪৩৩ গুলিয়ে যান না কেন বাঙালি বাড়িতে প্রতিটি অনুষ্ঠান হয় আজও বাংলা ক্যালেন্ডার কে সামনে রেখে।

তিথি নক্ষত্র দেখে অন্নপ্রাশন, বিবাহ, বাড়িতে সত্যনারায়ণের পুজোর আরম্ভ করে পূর্ণিমা কিংবা অমাবসায় ব্রত রাখা কিংবা সন্তোষী মায়ের পূজো থেকে আরম্ভ করে মা মনসার আরাধনা এছাড়াও গ্রামবাংলায় চারিদিকে ছড়িয়ে থাকা গ্রামের নানা দেব-দেবীর আগমন এই বাংলা বর্ষ ধরেই হয়ে থাকে বাংলার বারো মাস তেরো পার্বণের শুরু এই প্রথম পার্বণ প্রতিটি বাঙালি ব্যবসায়ীর ঘরে নতুন আসার সঞ্চার করে সাহস যোগায় এ বছরটা তাদের আরো ভালো কাটবে।

তাই প্রতিবছরের মতো মেতে উঠুন বাঙালির এই প্রথম পার্বণে https://khoborakhobor.in/ আপনাকে জানায়। শুভ নববর্ষ প্রীতি ও শুভেচ্ছা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *