মর্মান্তিক ঘটনা অন্ধ্রপ্রদেশের তিরূপতিতে ধারের অঙ্ক ছিল অতি সামান্য,মাত্র ২৫ হাজার টাকা। কিন্তু সুদে আসলে সেই অঙ্ক দাঁড়ালো একটা শিশুর জীবন । কী এমন হয়েছিল সেই দম্পতির যার কারণে একটা ছোট শিশুকে বন্ধক রাখতে হলো? শেষে কি আদিবাসী দম্পতির ধারের মাশুল তাদের সন্তান মেটালো?২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে কি এখনো ক্রীতদাস প্রথা চলছে আমাদের সমাজে ? এই সমস্তই প্রশ্ন উঠে আসছে এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায়।
যা এখনকার সমাজে কল্পনাতীত তাই যে এখনো অনেকের কাছে স্বাভাবিক তা এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল । আজ গোটা সমাজ যেখানে ভার্চুয়াল দুনিয়ায় মগ্ন, এআই(ai)চোখে প্রতিদিন বিজ্ঞানের কল্প লোকে ভেসে বেড়াচ্ছি। সেখানে আজও বর্ণ জাতি নিয়ে ভেদাভেদ বর্তমান। প্রদীপ এর তলায় যে সবচেয়ে অন্ধকার হয় তাই এই ঘটনা পেয়মান করে হাতে নাতে । আজ ২০২৫ সালেও আমরা এসব ঘটনা ঘটে চলতে দেখছি। আমরা উন্নত হচ্ছি ঠিকই তবে মানসিকতার উন্নতি ঘটাতে আমরা পিছিয়ে আছি। তারই ফলস্বরূপ ঘটে গেলো এক মর্মান্তিক ঘটনা অন্ধ্রপ্রদেশের তিরূপতিতে, জানা গেছে অভিযুক্ত হাঁসের ব্যবসাকারী ব্যক্তি এবং তার পরিবারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
অন্ধ্রপ্রদেশের তিরুপতিতে এই ঘটনা ঘটেছে, সেখানের এক হাঁস প্রতিপালনকারীর কাছেই কাজ করতেন দম্পতি প্রায় এক বছর যাবৎ । আদিবাসী সম্প্রদায় ভুক্ত অর্থাৎ নিম্ন শ্রেনীর বলে অত্যাচার এবং অবহেলা ছিল দৈনন্দিন বিষয়। কিছু প্রয়োজনে চেনচাইয়া ও তার স্ত্রী অনাকাম্মা ২৫ হাজার টাকার ধার করেছিলেন খামার মালিকের কাছে। শুধু ধার নয় সেখানে এক চুক্তি ও করা হয়েছিল যা প্রমাণ করে মধ্যযুগীয় বেগার খাটার মতো অভিশপ্ত এক প্রথা যা আজ বর্তমান । সেখানে বলা ছিল, অনাকম্মার স্বামী মারা গেলেও তাকে এবং তার সন্তানদের সেখানে খামারে কাজ করে সেই টাকা শোধ করতে হবে, টাকা শোধ না হওয়া পর্যন্ত তারা কোথাও যেতে পারবে না ।
ধার মেটাবার তাগিদে সেই পরিবার রীতিমত অনাকম্মা এবং তার ৩ সন্তান হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে থাকে। দিন রাতের কোনো ব্যাপার নয় তার মধ্যে মজুরিও খুব কম, সেই মজুরিতে ঋণ শোধ করা অসম্ভব হয়ে ওঠে। মজুরি বৃদ্ধির কথা বললে সেটা এড়িয়ে যায় খামার মালিক। সেই অবস্থায় অনাকাম্মা বেরিয়ে আসতে চাইলে খামার মালিক সুদে আসলে ৪৫ হাজার টাকা বলে দাবি করেন, সেই ঋণ শোধ করতে অনাকাম্মা ১০ দিন সময় চায়, সেই প্রস্তাবে খামার মালিক ও তার পরিবার রাজি হয়।
কিন্তু বিনিময়ে তার এক সন্তান বন্ধক রেখে যেতে বলেন। কোনো উপায় না পেয়ে তিনি তার ৯ বছরের শিশুকে বন্ধক রেখে যেতে বাধ্য হন। মাঝে মধ্যে কথা বলার সুযোগ পেতেন ছেলের সাথে, তার ছেলে কান্নাকাটি করত এবং তাকে সেখান থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলতো।
গত ১২ এপ্রিল ছেলের সাথে তার শেষ কথা হয়,অবশেষে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে টাকা জোগাড় করে ওনাকাম্মা ফোন করে জানায় সে তার ছেলেকে নিতে আসছে।কিন্তু তখন বাড়ির মালিক নানা অজুহাত খাড়া করতে সুকে করে, বলে তার ছেলেকে তারা অন্যত্র পাঠিয়েছেন, তারপর বলেন তার ছেলে অসুস্থ জন্ডিস হওয়ায় তাকে হাসপাতালে রেখেছেন,এমনকী তার ছেলে পালিয়ে গেছে সেই অজুহাত ও দিয়েছেন তিনি।
শেষ বিধবার অভিযোগ পেয়ে পুলিশ সেই ব্যক্তির কাছে উপস্থিত হন, পুলিশ তাদের বাড়ি তদন্তে যান এবং সেখান থেকে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে,পুলিশের জেরার মুখে চাপে পড়ে সেই ব্যক্তি স্বীকার করে অতিরিক্ত কাজ করানোর ফলে নাবালকের মৃত্যু হয়েছে, তাকে মাটি তে পুঁতে দেওয়া হয়েছে। তামিলনাড়ুর কাঞ্জিপুরমে ছেলের শবদেহ কবর দিয়েছেন। স্বীকারোক্তি পাওয়া মাত্র পুরো পরিবারকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং শিশুশ্রম প্রতিরোধ আইন,কৃতদাসপ্রথার প্রতিরোধ আইন,নাবালকের সুবিচার আইন, তফসিলি জাতি উপজাতির উপর অত্যাচার প্রতিরোধ আইন দায়ের করা হয় ।মঙ্গলবার সেই স্থানে কবর থেকে উদ্ধার হয় সেই শিশুকে, মর্গে পাঠানো হয়। পোস্টমর্টেম এর জন্য । সিসিটিভি ফুটেজ দেখা গিয়েছে অভিযুক্ত পরিবার ছেলেটিকে নিয়ে হাসপাতালে গেছেন ঠিকই কিন্তু সে জন্ডিসে মারা গেছে সেই বিষয় এখনো কোনো নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় নি, তা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে।
স্থানীয় তফসিলি জনজাতির উপর আজও নিপীড়ন চালিয়ে যাওয়া হয় সেই অভিযোগ করেছেন সেখানের স্থানীয় কিছু ব্যক্তি।সংবাদমাধ্যমে জানা যায় প্রশাসন বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন, যদি জন্ডিসে মারা গেছে ছেলেটি তবে এই ভাবে বিষয়টি সেই পরিবার অন্ধকারে রেখেছিল কেনো বা লোকানোর চেষ্টায় বা কেনো করেছিল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে । অনাকাম্মার হৃদয় বিদীর্ণ ছবি সেখানে ফুটে উঠেছে,ছেলেকে যেদিন উদ্ধার করা হয় তার মাটিতে লুটিয়ে হাহাকার ফুটে উঠেছে।এত বড় একটা ঘটনা ঘটে চলেছে দিনের পর দিন ধরে ক্রীতদাসদের প্রতি এমন দুর্ব্যবহার সমস্ত কিছুই কি সরকারের অজান্তে হচ্ছে? সেই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।

