1972 simla treaty suspended by pakistan

২২ এপ্রিল ঘটে যাওয়া পহেলগাওঁ এ পাকিস্তানী মদতপুষ্ট জঙ্গি হানায় ২৮ জন সাধারন নাগরিকের মৃত্যুর পরেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করেন যারা এই কাজের সাথে যুক্ত তাদের কাউকেই ছাড়া যাবে না।
এই ঘোষণার পর পরেই ভারতের পক্ষ থেকে কড়া পদক্ষেপ গুলি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়। তার মধ্যে ছিল,

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে থাকা হাজার ১৯৬০ সালে হওয়া হিন্দু জল চুক্তি বাতিল।

দুই দেশের হাইকমিশন বন্ধ করা হলে এবং সেখান থেকে কর্মীদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশে ফেরার কথা বলা হলো । ও পাকিস্তানের দূতাবাসের কর্মী সংখ্যা কমানো হয়েছিল ৫৫ থেকে ৩০ এ ।

আটারি ও ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করা হলো।

সমস্ত ভিসা বন্ধ করে দেয়া হলো এবং যা ইসু করা হয়েছে তা বাতিল করা হলো।

আর এতেই শোরগোল পড়ে যায় পাকিস্তানের অভ্যন্তরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী সেহেবাজ শরীফ তড়িঘড়ি উচ্চ পর্যায়ের মিটিং ডাকেন ও ভারতের এই কড়া পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তারাও বেশ কয়েকটি প্রস্তাব নিজেদের মধ্যে পাশ করে তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলেও সিমলা চুক্তি রদ।

  • সিমলা চুক্তি ছাড়াও আর যে সমস্ত পদক্ষেপ পাকিস্তান নিয়েছে সেগুলি হল:
  • ভারতের সঙ্গে সব রকম বাণিজ্য বন্ধ করা হলো।
  • ভারতীয় বিমানের জন্য পাকিস্তানের আকাশ পথ সম্পূর্ণ হবে নিষিদ্ধ করা হলো।
  • ভারতের মতো পাকিস্তানের ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করল অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত।
  • শিখ পুণার্থী ছাড়া পাকিস্তানে থাকা সমস্ত ভারতীয়দের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে দেশ ছাড়া নির্দেশ দিল।
  • পাকিস্তানের থাকা ভারতের প্রতিরক্ষা নৌ বাহিনী ও সেনাবাহিনীর উপদেষ্টা কে অবাঞ্ছিত বলে ঘোষণা করা হলো ।
  • এছাড়াও ভারতীয় দূতাবাসের সদস্য সংখ্যা কমিয়ে ৩০ এ নিয়ে এল পাকিস্তান।

পাকিস্তান ভারতের মালিকানাধীন সমস্ত বিমানকে তাদের আকাশ পথ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এর ফলে প্রাচ্যের দেশগুলো ইউরোপ ও সেন্ট্রাল এশিয়ায় থাকা দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক কক্ষতি হতে পারে ভারতের এছাড়াও পাকিস্তানের আকাশপথ না ব্যবহার করার ফলে ভারতের বিমান চলাচলের সময়সীমা ও তেলের খরচ বাড়বে এবং অর্থনৈতিক ও লজিস্টিক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে ভারত।

সিমলা চুক্তির মতোই আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ অথবা বলা যেতে পারে করা হুশিয়ারি জানানো হলো পাকিস্তানের তরফ থেকে রীতিমতো হুমকির সুরে, সেটি হল সিন্ধুর জল যদি বন্ধ করা হয় তাহলে সেটিকে যুদ্ধ হিসেবে ঘোষণা করা হবে।

সিন্ধু জল চুক্তি অনুযায়ী ইন্দাস, ঝিলাম,ও চেনাব নদীর জল এর ওপর কর্তৃত্ব থাকবে পাকিস্তানের। আর সিন্ধু নদীর এই উপনদী গুলি দ্বারা প্রায় ৮০ শতাংশ জল বাহিত হয়ে আরব সাগরে মিশে যা পাকিস্তানের মূলত প্রধান জল সরবরাহের অংশ। তাই এটি বন্ধ করা হলে সেটাকে যুদ্ধ হিসেবে ঘোষণা করা হবে বলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ জানিয়েছেন।

এছাড়াও সমস্ত দ্বিপাক্ষিক চুক্তিকে স্থগিত রাখা হলো অনির্দিষ্টকালের জন্য।

এখন দেখে নেওয়া যাক এই সিমলা চুক্তি কি ? এর গুরুত্বই বা কতখানি?

সিমলা চুক্তি

১৯৭১ সালে ভারতের সাথে পাকিস্তানের যে যুদ্ধ হয় বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে এবং বাংলাদেশ নামে নতুন যে রাষ্ট্রের জন্ম হয় তারপরে পরেই ভারতের সাথে পাকিস্তানের একটি চুক্তি হওয়ার কথা ঘোষণা হতে থাকে সেই চুক্তির নামই শিমলা চুক্তি নামে পরিচিত এটি 1972 সালে স্বাক্ষরিত হয় তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর সাথে।

এতে পরিষ্কার করে বলা হয় যে কাশ্মীর নিয়ে যে দু দেশের মধ্যে যে টানাপোড়েন চলে আসছে তা এই দুটি দেশে এর আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করা হবে। এবং এখানে কোন তৃতীয় শক্তির নাক গলানোকে বরদাস্ত করা হবে না।
তবে বর্তমান ক্ষেত্রে প্রায়ই দেখা যায় ভারত এই চুক্তিকে যথাযথ সম্মান করলেও পাকিস্তান ইউনাইটেড নেশনস ও অন্য সমস্ত জায়গায় বিশেষ করে আমেরিকা ও চীনের মধ্যস্থতা দাবি করে কাশ্মীরকে তাদের করায়ত্ত করার জন্য।

এই চুক্তিতে আরো বলা হয় লাইন অফ কন্ট্রোল অর্থাৎ LoC এর সীমারেখা কে দুই দেশ মেনে চলবে।

এই ক্ষেত্রেও দেখা যায় পাকিস্তান বিনা প্ররোচনায় LoC অতিক্রম করে ও দুই দেশের মধ্যে cease ফায়ার কে লংঘন করে বারংবার।

এখন ঘটনা হলো এই সিমলা চুক্তি রদ করার ফলে ভারতের ওপর কি কি প্রভাব পড়তে চলেছে।
সিমলা চুক্তি বন্ধের মধ্যে দিয়ে পাকিস্তান ভারতের কে জানাচ্ছে যে তারা আর দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় যেতে রাজি নয় তারা অন্য কোন তৃতীয় শক্তিকে বিশেষ করে চীন এবং ইউনাইটেড নেশনসকে মধ্যস্থতার জন্য নিয়ে আসতে চায়।

এই চুক্তির মধ্যে দিয়ে হয়তো ভারতের খুব একটা বেশি ক্ষতি হওয়ার কথা নয় তবে পাকিস্তান এটিকে প্রতীক হিসেবে সামনে রাখতে চাইছে।
এর ফলে তারা এটাও জানিয়েছে ভারত ও পাক সীমান্তে বেশি করে পাক সেনা মোতায়েন করা হবে ও পরবর্তীকালে এটিকে তারা যুদ্ধের মহড়া হিসেবে ভারতকে একটি পরোক্ষভাবে হুমকিও দিয়ে রাখছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *